মিয়ানমারের ইতিবাচক সাড়ার অপেক্ষায় বাংলাদেশ
অব্যাহত আন্তর্জাতিক চাপ ও মন্ত্রীপর্যায়ের সফর বিনিময়ের পর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রশ্নে মিয়ানমারের সুর নরম হলেও এখনো স্পষ্ট নয়। বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি বলেছেন, বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে তাঁরা কাজ করে যাচ্ছেন।
সু চি জানান, তাঁরা এ ক্ষেত্রে কফি আনান কমিশনের প্রতিবেদন ও জাতিসংঘে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া পাঁচ দফা প্রস্তাব সামনে রেখেই এগোচ্ছেন। নভেম্বরেই দুই দেশের যৌথ ওয়ার্কিং কমিটি গঠিত হবে। এ কমিটি প্রত্যাবাসনের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো নির্ধারণ করবে এবং তার ভিত্তিতে প্রত্যাবাসনপ্রক্রিয়া শুরু হবে। ফলে সেনা নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা মিয়ানমারের কয়েক লাখ নাগরিকের চরম দুর্দশা দ্রুতই লাঘব হবেÑএমনটা বলা যাচ্ছে না।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খুব যে ভালো তা নয়। এর পরও মানবিক কারণে লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিতে বাধ্য হয়েছে। মিয়ানমারের সেনা নির্যাতনের বিরুদ্ধে সারা বিশ্ব প্রতিবাদমুখর হয়েছে। অনেক বিশ্বনেতাই মিয়ানমারের সেনা নির্যাতনকে গণহত্যার শামিল বলে উল্লেখ করেছেন। বেশ কিছু উন্নত দেশ মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা বিবেচনা করছে।
চীন, ভারত ও রাশিয়া প্রথমে মিয়ানমারের গৃহীত ব্যবস্থার প্রতি সমর্থন জানালেও এখন তারাও ক্রমেই কফি আনান কমিশনের সুপারিশ মেনে সংকট সমাধানের দাবি জানাচ্ছে। চীন বিষয়টি দ্বিপক্ষীয়ভাবে সমাধানের পরামর্শ দিয়ে বলেছে, প্রয়োজনে তারা মধ্যস্থতা করতেও সম্মত। এ অবস্থায় মিয়ানমারের কাছে বিশ্ব ইতিবাচক মনোভাব আশা করলেও তারা সময়ক্ষেপণের নানা কৌশল নিচ্ছে। আমাদের মনে রাখতে হবে, মিয়ানমারের সঙ্গে অতীত অভিজ্ঞতাগুলো খুব সুখকর নয়। মিয়ানমার চুক্তি করেও তা বাস্তবায়ন না করার দৃষ্টান্ত রেখেছে। তাই সমঝোতাপ্রক্রিয়ায় জাতিসংঘ, ওআইসিসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ থাকা জরুরি।
দ্রুত সমাধান না হলে এ রোহিঙ্গা সমস্যা নানামুখী ডালপালা বিস্তার করতে পারে। তাতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উভয় দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আঞ্চলিক নিরাপত্তাও হুমকির মুখে পড়তে পারে। মিয়ানমার যে তা উপলব্ধি করে না, তেমন নয়। তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ সমস্যার সমাধানে উভয় পক্ষকে আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে। ১০ লাখের বেশি বাস্তুচ্যুত মানুষের দুর্দশাগ্রস্ত জীবনের দ্রুত অবসান হোক।